Social Icons

twitterfacebookgoogle plusrss feedemail

সুইসাইডাল নোট

রিয়া অতি সাবধানে তার নিজের লেখা সুইসাডাল নোট টি তার টেবিলের ড্রয়ারে রাখলো । এই কাজ টা সে আজকাল প্রতিদিনই করছে । প্রতিদিন নতুন নতুন মরার আইডিয়া নিয়ে একটা ইমশোনাল ভরা চিঠি লিখে আবার পরের দিন সেটা নিজেই ছিড়ে ফেলে । আজকের কথাটা ভিন্য হতে পারতো আজকে তার হাতে মোক্ষম সুযোগ আছে । হাতের কাছে একটা র‍্যাট পয়জন যেটার সোজা বাংলায় ইদুঁর মারা বিষ আছে । সে শুনেছে এটা খেয়ে বেশ কয়েকজনই মরেছে । কিন্তু রিয়ার মরার চান্স নেই কারন সে জানে যে তাকে সেটা খেতে বলছে সে নিজেই চায়না রিয়া মরুক । আরেকটা আইডিয়া রিয়ার মাথায় এসেছে হাতের রগ কেটে মরা কিন্তু রিয়া সেরকম কাটাকাটি করতে পারবেনা । একবার সে রাগ করে হাতে ব্লেড ধরেছিলো কিন্তু টান দিতে পারেনি । সামান্য হাত কাটতে পারবেনা যে মেয়েটা সে কিভাবে রগ কাটার এই চরম কাজটার সাহস নিবে ? হমম আরেকটা আছে ঘুমের অসুধ । বেশ কয়েকটা খেয়ে ফেললে ?
কিন্তু আজকাল সেই সুগার ফ্রী ট্যাবলেট খেয়ে মরার চান্স একদম নেই । মনে মনে একতাল খাটি বাংলা গালি দিলো অসুধ কম্পানীগুলাকে । এমন অসুধ বানায় না তারা যে একটু শান্তিমত মরতে পারবে । রিয়া এখন চিন্তা করতেছে যে কি কি মিশিয়ে খেলে মৃত্যূ অনিবার্য প্রথমে বেশ কিছুটা র‍্যাট পয়জন খেয়ে তারপরই ঘুমের অসুধ খাবে এতে তার ঘুম পাবে এবং বিষের কারনে সে মারা যাবে । নাহলে সে কিছু পটাসিয়াম সায়ানাইট কিনে আনতে পারবে এতেই কাজ শেষ ।
- রিয়াপু ও রিয়াপু
রিয়ার চিন্তার সুতায় ছেদ পড়লো পিচ্চি রায়হানের ডাকে । সময় অসময় এই ভয়ংকর টা এসে টপকাবে।
এখন তাকে তার দরজাটা খুলতে হবে এরপর হাসি মুখে আদর করতে হবে । মাঝে মাঝে এই পিচ্চি টা রিয়ার ল্যাপটপের কিবোর্ডের সুইচ গুলাকে মনে করে পিয়ানো বাজানোর মোক্ষম জিনিশ এবং সাথেই ঝড়ের গতিতে মাশাল্লাহ দুই হাতে ধাম ধাম করে
তার সংগীত চর্চা করবে। গান সে গাইতে পারে তাও কয়েক্টা থেকে মিলিয়ে ঝুলিয়ে
" এক আকাশের তারা তুই একা গুনিসনে গুনতে দিস তুই কিছু মোরে ও পিয়া ওপিয়া তুমি কোথায় ? ..........."
-রিয়াপু রিয়াপু রিয়াপু! !!
-হু বল। ( দরজা খুলে)
-আইলাবু ।
এটা রিয়া নিজেই শিখিয়েছিলো পিচ্চিটাকে । আজ সেটাই শুনে তার মাথা গরম হয়ে উঠলো । হয়তো পিচ্চিটার গালে কষে একটা থাপ্পড় দিলে একটু শান্তি পেতো । কিন্তু সে মাথা ঠান্ডা রাখে বললো ।
-কি চাই?
-গেম ।
- গেম নাই কম্পিউটার নষ্ট।
- কালকেই তো ছিলো ।
-আজকে নেই।
-না আয়ায়ায়ায়া
-কি? চেচাস কেন?
-গেম দাও।
-নাই তুই এখন ডোরেমন দেখ যা। কালকে আসিস।
-না।
- উহহ আয় তোর সব গেম আজ বাহির করবো।
এরপর দরজা থেকে সরে যেতেই পিচ্চি রায়হান কে দেখা গেলো দৌড়ে ঘরের ভিতর ঢুকে পরিচিত হাতে রিয়ার ল্যাপটপ অন করতে।
এবং অন করে রিয়ার দিকে একবার তাকিয়ে বলে রিয়াপু খেলবোনা বলেই দে ছুট । সেটা দেখে রিয়ারো একটু আপসোস হচ্ছিলো কারন রায়হান মাত্র তিন বছরের একটা পিচ্চি এর মাঝেই তার সব গেম মুখস্থ । কিন্তু সে রিয়ার আজকের মন মানুষিকতার সাথে পরিচিত না । শুধু শুধু রাগী স্বরে কথাবলে পিচ্চিটার মন ছোট করে দিলো ।
রিয়া আবার ফিরে এলো তের আগের চিন্তায় । মানুষের পক্ষে নতুন চিন্তা হতে আগের চিন্তায় ফিরে আসা মানেই হয়তো সে কোন দুঃচিন্তায় আছে কিংবা সে আসলেই ভীশন দুঃচিন্তায় আছে । রিয়ার এখন নিজেকে ক্ষতবিক্ষত করতে ইচ্ছে করছে । রিয়ার আজ সিরিয়াস রকমের মন খারাপ । একসময় লেখক হুমায়ূন আহমেদ এর "অনিল বাগচীর একদিন" বইয়ে পড়েছিলো " মন বিগড়ে গেলে শরীরকে কষ্ট দিয়ে মন ঠিক করতে হয় " । রিয়ার এখন সেই লাইনটা তার মাথায় এন্টিক্লকও্যাইস ঘুরছে ।
রিয়া এখন হাসপাতালে । মাথায় এবং হাতে প্রচন্ড ব্যাথা । কিভাবে এলো তা সে জানেনা । হটাঠ চোখ খুলে দেখল সে হাসপাতালে । কিচ্ছুক্ষন মনে করছে কি কি করেছে সে ? । সব মনে পড়েছে তার । কালকে সে কাঁদতে কাঁদতে সেই র‍্যাট পয়জন টা পুরোটাই খেয়েছিল যদিও সেটা খেয়ে বমি এসে পড়ছিলো তার সাথেই বের করে রাখা সেই সুগারফ্রী কড়া ঘুমের অসুধ ডজন খানেক খেয়ে একগ্লাস পানি খেয়েছিলো । রিয়া দেখলও তার মাথায় একটা ব্যান্ডেজ কিন্তু সেটার ঘটনা সে জানেনা ।
- প্রিয়ে
রিয়ার বালক বন্ধু এখন তার সামনে । এবং শয়তানটা রিয়ের এই পরিস্থিতিতেও দাঁত ক্যেলিয়ে হাসছে । রিয়াও অন্যদিকে ঘুরে জবাব দিল যদিও সে কোন কথা বলতে চাচ্ছিলো না কিন্তু কি করে যে বলে উঠলো ' হু ' । হয়ত বা অভ্যাস বসত ভুলে ।
- আপনি আজকাল কি কুংফু পান্ডা ওস্টাদকে ফলো করতেছেন নাকি ? সাথে সেই ডিস্কভারি চ্যানেলের বিয়ার গেইলস গুরুকেও ?
- মানে ?
- আজকাল ইঁদুরের সাথে মিল মহাব্বত লাগিয়েছ তাদের দেয়া খাবার খাচ্ছো আবার কুংফু করে মাথাটার তেরোটা বাজিয়ে দিলে ভাগ্যিস চৌদ্দটা বাজাওনি ।
- বাজে কথা বলিও না । কিছু বলার থাকলে বল নাহলে সামনে থেকে যাও ।
- ( রিয়ার কাছে এসে )
এই বুড়ি কি হয়েছে তোর ?
- কিছুনা ।
- তাহলে ওদিকে তাকিয়ে আছিস কেন ?
- ইচ্ছে করছে ।
- এতো ইমোশন কেন রে তোর ? আমার সেই সামান্য কথায় তুই এমন করলি ?
- ( রিয়া চুপ করে আছে সাথে তার চোখ জলে ভরে উঠছে )
- তোকে এততা কষ্ট দেয়া ঠিক হয়নিরে । আমাকে ছাড়িস না আমার মতন কাওকে পাবিনা ?
- তুমি একটু বাহিরে যাবে ?
- হু যাচ্ছি । আরে আরে আরে আরে কাঁদছিস কেনো ? এখোনো তো রোমান্টিক ডায়লগ গুলো ঝাড়াই হয়নি । এতেই ? আচ্ছা যাচ্ছি । ত হাতটা ছাড় ।
এ বলে নাফিস যখনি হাত টা ছড়িয়ে নিতে যাচ্ছিল রিয়া তখন রিয়া নাফিস্কে ধরে হু হু করে কাঁদতে শুরু করলো ।
- রিয়ারে আমি চাইনি তোকে এমনকরে কষ্ট দিতে ।
- তো কেনো দিলে ?
- পেতে হয় মাঝে মাঝে এমন কষ্ট না পেলে কি ভালোবাসা জমে ? তুমতো জানতেহি হোগি ।
- ( রিয়া চুপ )
- তোর সুইসাইডাল নোট টা পড়েছি ভালই লেগেছে কিন্তু তুই দূটো বানান ভুল করেছিস । এরকম আবেগের জিনিশে বানান ভুল করলে কি চলবে ? হু ।
নাফিসের কথা শুনে রিয়া কাঁদতে কাঁদতেও হেসে ফেললো । পাগলটাকে কি আর এমনিই এতটা ভালোবাসে সে ?

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

ধন্যবাদ পোষ্ট পড়ার জন্য । আপনার মুল্যবান মন্তব্য এর আশা করছি ।

 
twitterfacebookgoogle plusrss feedemail