Social Icons

twitterfacebookgoogle plusrss feedemail

রং

-তো তুমি কি আজকেও সেই প্রথমদিনটার মত আছো ?
-হ্যাঁ । তবে এখন কিছুটা পরিবর্তন হয়েছি ।
-মনে হয় না কারন সেদিনের প্রতিবিম্ভ আমি এখনো তোমাএ মাঝে দেখি ।
-কিরকম ?
-আমায় ভালোবাসো না কিন্তু তা সরাসরি বলে কষ্ট দিতে চাও না ।
-তুমি কেনো ? আমি কাওকে কখনোই কোনভাবে কষ্ট দিতে চাই না ।
-সেটা আমি জানি । এতো নরম মনের মানুষ হয়ে সবসময় অমন গুপচি মেরে থাকো কেনো ?
-কিরকম ?
-এই ধর যে রাস্তায় হাটছো কিন্তু হুশ জ্ঞান নেই কাকে পাশ কাটিয়ে গেলে আর কাকে অভারটেক করলে ।তার উপর কানে ইয়ারফোন লাগালে মনে হয় দুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন কোন এক মানুষ ।
-আমার ওইসব খেয়াল থাকেনা মাঝে মাঝে আমি আমার বাবাকেও চিনতে পারিনা । বাবা বাসায় এসে মা কে ডেকে বলেন “ঐযে তোমার মহারাজা ছেলে বাপের সামনে দিয়ে হন হন করে হেঁটে যান আর বাআব উনারে ডাকলেও শনেন না । বলি উনি কোন জগৎ এ থাকেন উনাকে একটু বাস্তবে আসতে বল নাহলে কপালে বিপদ আছে ।
-ভয়ংকর অবস্থা ।
-অনেকটাই সেইরকম ।
-একটা সত্যি কথা বলবে ?
- বল ।
-আচ্ছা আমার মধ্যে কিসের অভাব আছে যে তোমার মনে আজকেও যায়গা করে নিতে পারিনি ?
-উম্মম চিন্তা করে বলতে হবে হুহ ।
-ঐরকম হুহংকার না দিয়ে বলে ফেলো ।
-ওকে ডিরেক্টলি না ইনডিরেক্টলি ?
-একদম ডিরেক্টলি ।
-তোমার মধ্যে অভাবের অভাব আছে ।
-অভাবের অভাব ? মানে কি ?
-যার সবকিছুই পুর্ন্য থাকে তারই অভাব নামক জিনিষটার অভাব থাকে ।
-আচ্ছা আমরা কি আর একবার দেখা করতে পারি ?
-কিজন্য ?
-সেটা তুমি অনেক ভালোমত জানো তাই একবারের জন্য প্লিজ আমাকে যখন যেখানেই ডাকবে আমি যাবো । তবুও একবার ।
-হবেনা ।
-অন্তত আমার জন্য একবার মাত্র আর কখনো নয় । কখনোই করবোনা ।
-আমাদের মাঝে আরো কিছু কি বাকি আছে ?
-মানে ?
-আমি তোমাকে সব তো ফাইনালি বলে দিয়েছিলাম আমার থেকে দূরে সরে যাও ।
-আমি চাই । কিন্তু আর একটা বার মাত্র । একটা বার প্লিজ ।
টূট.. টূট... টূট …...
হুটকরে ফোন কাটার এই শব্দটা পেয়ে হৃদির ভেতর থেকে অসীম দুঃখের একটা কান্না ঠেলে বের হয়ে আসতে চাইলো । হটাৎ করে পায়ে যাওয়া কান্না লুকানো সাধারনত একটু কঠিনই হয়ে পড়ে । হয়তো পাশে কেও টের পেয়ে যাবে এই ভয়েই যত দ্রুত সম্ভব মুখ অন্য দিকে ঘুরিয়ে রাখতে হয় কিংবা নিচু করে রাখতে হয় মাথাটি । অন্তত একবার চেয়েছিলো ছেলেটা আবারো একটাবার দেখা করুক । অর সব কথাই মেনে নিতো । শুধুমাত্র শেষ একবার ওর সাথে ঘুরে আসুক । হৃদি একবার ওকে চিৎকার করে বলুক “ অনেক ভালোবাসি তোমাকে । অনেক অনেক ভালোবাসি ।“ চেয়েছিলো ছেলেটা একবার হৃদির হাত নিজের হাতে ধরে অনেক্ষন ধরে ধরে থাকুক । কিংবা পকেট থেকে এক টুকরা কাগজে লিখে আনা কোন কবিতা বের করে তা হৃদিকে উদ্দেশ্য করে পড়ুক । কখনো সুন্দর করে সেজে এসে “ নিজেকে কেমন লাগছে ? “ এ কথা হৃদি জিঙ্গেস করলে ছেলেটা যেনো আবারো বলে উঠুক “ লিপস্টিকটা একটু বেশিই ডলা হয়ে গেছে । আর মনেহয় আটা ময়দার দামটা আরেকদফায় বাড়লো “ । কিন্তু হৃদি কি অন্তত আর একবার এসব পাবে ? ভালোবেসেছিলো বলেই কি আর একবার এসব পাওয়া তার উচিৎ নয় ? এসব মনে করেই হৃদি কাদঁছে । মুখে একটা বালিশ চাপা দিয়ে শব্দটা কমিয়ে নিচ্ছে । আবারো কাঁদছে সেই বালিশ ভেজা কান্না ।
খুব যত্নে একটা নীল শাড়ী পড়া একটা মেয়ে গাড়ি থেকে নেমে ড্রাইভারকে বললো “ সোজা বাসায় চলে যাবেন কোন ডান বামে তাকাবেন না । নো হেংকি পেংকি বলে দিচ্ছি । “ এই বলেই চারিদিকে একবার নজর বুলিয়ে নিলো । নেই । একটা ফাঁকা জায়গায় গিয়ে বসে পড়লো সে । এটা প্রথম নয় আগেও অনেকবার এরকম অপেক্ষা করেছে মেয়েটি । বেনিফিট শুন্য । অদুরে মেয়েটি যেখানে বসেছে তারই রাস্তার উলটা পাশে এক চায়ের দোকানের কোনায় ডান হাতে মোবাইল আর বাঁ হাতে চায়ের কাপ । ফোনের স্ক্রিনে হৃদির নাম এবং ফোনটা বাজছে । আজ হৃদির জন্মদিন । এদিনে সবারই সবকিছু নতুন মনে হয় । একটু বেশিই দেরি করে ফেলেছিল উঠতে মেয়েটা । কিন্তু উঠেই ফোনে দেখলো অর্নবের একটা ছোট্ট ম্যাসেজ । “ বিকেলে টি এস সি তে আসিও । একা আসবে আর একটা নীল শাড়ী পড়ে আসবে । আর আমরা যেখানে বসতাম সেখানে থাকবে ।“ ছেলেটা কখনো হৃদিকে কোন খানে কোন স্পেশাল পোষাকে ডাকেনি । কিংবা চোখে চোখ রেখে কখনো কথা বলেনি । সবসময় অন্যদিকে তাকিয়েই কথা বলতো যদিও তারা পাশাপাশি বসে থাকে । ছেলেটি প্রথমবারের মত একটা সাদা পাঞ্জাবী পড়ে এসেছে এবং যথারিতি জিন্সের প্যান্ট ।
এখন হৃদি আর অর্নব হাটছে । রাস্তার ল্যাম্পোস্টের আলোয় হৃদির হাতগুলোও হলুদ বর্ন ধারন করেছে । মেয়েটা মাথা নিচু করে হাটছে । অর্নব কোন কথা বলছে না । অন্যদিন ফটকরে বলে উঠতো “ চল উলটা পথে হাঁটা ধরি” কিন্তু আজকে তারা হাটঁছেই উল্টাপথে । উদ্দেশ্যহীন ভাবে হাটাহাটি । অর্নবের অচ্ছে করছে পকেট থেকে একটা বেনসন বের করে ধরাতে । কিন্তু সবসময় সবকিছু করা যায় না এখন সিগারেট টা জ্বালাতে গেলে হৃদির হাতটা ছেড়ে দিতে হবে সেটা অর্নব চায় না । আজ হৃদির সব কটা ইচ্ছেই পুরন হয়েছে । নিজের ঠোঁটের পুরো লিপস্টিক মুছে ফেলেছে অর্নবের কথায় । আজ প্রথমবারের মত অর্নব বলেছে লিপস্টিকহীন ঠোঁটেই হৃদিকে সুন্দর লাগে । অর্নব আবারো বলেছে “ যদি কখোনো কাওকে বিয়ে টিয়ে করি তাহলে তাকে এই নীল রঙের শাড়ীতেই বাড়িতে উঠাবো ।“ সাথেই হৃদির ডান হাতটা ধরে আগের মতন চুপটি করে বসেছিলো ছেলেটা হৃদিও নিশ্চুপ । হটাৎ কি যেনো হল হৃদি চিৎকার করে উঠলো অর্নবের উদ্দেশ্যে “ অনেক ভালোবাসি তোমাকে অর্নব অনেক অনেক বেশি “ বলেই মুখ লুকালো । অর্নব এটার জন্য প্রস্তুত ছিলো না তার হতচকিত হয়ে চারদিকে দেখলো অনেকেই হৃদির পাগলামীর জন্য তাদের দিকে তাকিয়ে আছে । আবার কেও কেও ফ্যাল ফ্যাল করে হাসছে । তারপর থেকেই অর্নব আর হৃদি সেখান থেকে উঠে হাটা ধরেছে । হৃদির ইচ্ছে আজ তারা সারারাত হাটুক কিন্তু অর্নব তাতে রাজি হবেনা ।
-হৃদি ।
-বলো ।
-এখন বাসায় যাও ।
-না ।
-বাসায় যাবে তুমি এখন । আমি রিকশা ডাকছি ।
-আর একটু পর ।
-নাহ । এখনিই রাইট নাও ।
-আমাকে আর ভালো লাগছে না ?
-বাজে কথা বলিও না যেটা বলেছি সেটা কর ।
এরপর হৃদিকে একটা রিকশায় উঠিয়ে দিয়ে নিজের বাড়ির পথে হাঁটা ধরলো অর্নব ।
হৃদি মেয়েটা চুপ চাপ বসে আছে তার ঘরের আয়নার সামনে । নিজের চোখে চোখ মেলাতে পারছে না । নিজের চোখ দেখলেই অর্নবের কথা মনে পড়ছে । উঠেগিয়ে ঠাশ্ করে ঘরের লাইট টা অফ করে বিছানায় গা এলিয়ে শুইয়ে পড়লো মেয়েটা । টেবিলের উপড়থেকে ফোন বাজছে পর পর দু তিনবার বাজার পর সেটা হাত বাড়িয়ে রিসিভ করে বলে উঠলো
-হ্যালো ।
-(ওপাড় থেকে গভীর গলায় ) কি বিজি ?
- যদিও ফোনটা ধরা উচিত্‍ ছিলো না ।
-ইয়েস ।
-কিছু বলবে ?
- উমমম হু ।
-কি বলবে বলো ।
- ইয়ে আগে দেখোতো কয়টা বাজে ?
-মানে ?
-আরে সময় কত ?
-বারোটা বাজে ।
-আহারে বারোটা পার হইছে ?
-না দুমিনিট বাকি আছে ।
- (কিছুক্ষন চুপ থেকে) হ্যাপি বার্থডে হৃদি ।
-এটা কি উইশ করার সময় দিনটা পারই তো হয়ে গেলো । আর এখন দিচ্ছ ?
- আমি তোমার জন্মদিনের প্রথম উইশার না হলেও যেন একদম শেষের টা হই।
- পাগলামি না ?
- নাহ ভালোবাসি ।
- বাসোনা জানি ।
-আরে বাসিরে ।
- আমি এখন বাসিনা ।
- আচ্ছা !
- কি আচ্ছা ?
- কিছু না । কালকে দেখা করবে আরেকবার ?
-না ।
-পড়শু ?
-না ।
- তাহলে শুক্রবার ?
-না ।
-তাহলে কবে ?
-কখনো করবোনা আর ।
-এবার আমি চাচ্ছি । প্লিইইইইইইইজ ।
-না সাহেব ।
-প্লিজ প্লিজ প্লিজ শোনোওওও….
টূট... টূট.... টূট......

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

ধন্যবাদ পোষ্ট পড়ার জন্য । আপনার মুল্যবান মন্তব্য এর আশা করছি ।

 
twitterfacebookgoogle plusrss feedemail