Social Icons

twitterfacebookgoogle plusrss feedemail

তুলশী

এই প্রথম নন্দিতার মুখে আসল হাসিটুকু। পিওর হাসি যেতাকে বলে। রাত নয়টা বেজেছে সময় দেখলো ও। মনে মনে দিন গুলোর গননা করে ফেলছে এসময়। এক দুই তিন, একমাস দুমাস ছয়মাস একদম পাক্কা এক বছর। এক দিন যদি চব্বিশ ঘন্টা বা চৌদ্দশত এর অধিক মিনিট হয়। একবছর তাহলে হবে....
হিসেব এর মাঝেই ডুবে আছে মেয়েটা। আনগুলে হিসেব চলছেই। পাসেই ফুতপাতে বসে বসে তাই দেখছে নূহাশ । এক মুহুর্ত কি যেন মনে পড়েগেল ছেলেটার। মুখে হাসির হালকা চাদ উদয় হল নুহাশের। অবাস্তব ধৈয্যের এর অদ্ভুত ক্ষমতা আছে তার। নুহাশ বসে আছে কখন নন্দিতার ফোনে কথা শেষ হবে এর জন্য। নন্দিতার ফোন কল কাটা হয়েছে বেশ কিছুকাল আগে মেয়েটা কিসের যেন হিসেব করছে। হাতের আনগুলে গোনাগুনতি দেখেই বুঝে নিল সে। তবুও ডাকছে না ও নন্দিতাকে। এইসময় নন্দিতাকে কার সাথে তুলনা করা যায় তা নিয়েই ব্যাস্ত হবার চেস্টা করছে সে।
দুবার কাশি দিলো বেশ জোরে সরেই দিলো নুহাশ অনেকটা অভিনয় করেই। নন্দিতার আনগুলে হিসেব চলছেই। এক বছর বারো মাস, তিনশো পয়সট্টি দিন, পাচলাখ পঁচিশ হাজারের বেশি মিনিট , তিন কোটি পনের লক্ষ ছত্রিশ হাজার সেকেন্ডের মত অনেকটা সময়।
গতকালকেই সব প্লান করেরেখেছে নূহাশ আজ বিকেলে নন্দিতাকে নিয়ে বের হবে। প্রথমে যাবে ইবনেসিনা হাসপাতালে ঢানমন্ডি তে। সেখানের কাজ সেরে হেটে হেটে রবিন্দ্র সরবরে যাবে। তারপর কিছু গল্প আড্ডা। নন্দিতার কথা নূহাশ তার বন্ধুদের বলেছে একবার না দেখা করালেই নয়। আজকেই দেখা করাবে নন্দিতাও তাই চেয়েছিলো। প্লান মতাবেক ইবনেসিনা তে কাজ সেরে তাদের আড্ডার যায়গায় গেল তারা বিকেলে। কয়েক্টা দিন নন্দিতা কি সব বলবে বলবে বলছে কিন্তু সম্পুর্ন ভাবে বলতে পারছে না । অতীতের কথা কিছু মিস্রিত কিছু গল্পকথা। জিবন বই এর কয়েকটা পাতা। নূহাশ খেয়াল করল আজ নন্দিতার ফোনে বেশ কয়েকটা ফোন এসেছে এবং অনেক দির্ঘ্য সময় ধরে কথাবাত্রা হচ্ছে। এখানে বসার পরও তাদের অখাদ্য পুর্ন্য কথাবাত্রা দুলাইন বলা হয়নি এর মাঝেই আবার ফোন। নূহাশ বসেই আছে নন্দিতার পাশে। অপেক্ষা। নূহাশের মাথায় একটা লাইন ঘুরছে " অপেক্ষার প্রহর মিষ্টি কিন্তু এর স্বাদ তিতা " সেই তিতা স্বাদ নিয়েই যাচ্ছে নূহাশ। মিস্টি টাইপের তিতা।
নন্দিতা না চেয়েও কথা বলে যাচ্ছে। নিছক ভাবে কাকে ধন্যবাদ দিচ্ছে। আর পায়ের উপর পা তুলে ঝাকাচ্ছে। সকাল থেকে এই পর্যন্ত ত্রিশটার উপড় ফোন এসেছে। মাথাটাও ব্যাথা করতেছে নন্দিতার। এক ফাকে নূহাশকে দেখলো মাথা নিচুকরে কিযেনো দেখছে। ছেলেটা সাধারন এক জিনিশ নিয়ে অদ্ভুত সব করতে পারে। এখন সে মাথা নিচুকরে মানুষের পা দেখছে। সে প্রায় এক কথা বলে সুন্দর পা ওয়ালা মেয়ে তার অনেক পছন্দ। এই কথাটা মনেপড়ার সাথেই নিজের পা দেখলো নন্দিতা। নন্দিতার পা কি কখনো নুহাশ দেখেছে ? কিভাবে দেখেছিলো? তার পা বিষয়ক গবেশনায় আমার ফল কি? এই চিন্তাটা এক মুহুর্তের জন্য আসল তার মাথায় এইসব চিন্তার মাঝেই সে দশ সেকেন্ড ডুবেছিলো ফোনের ওপারে কার কি কথায় হুস ফিরলো । আবার কথা চলতে থাকলো নূহাশের অজানা কারো সাথে। নূহাশ এখনো নিচের দিকে তাকিয়েই আছে ।
কানের কাছে মশার গান শুনতে পেল নূহাশ। কল্পনাবলে তাদের কথা বোঝার চেস্টা করছে ও ।
তাদের কথা বাত্রা এইরকম
প্রথম মশা : কিরে ব্যাটারা খালি গান শুনাবি নাকি পেটে কিছু খাদ্য পড়বে?
দ্বিতীয় মশা : আরে তোরা বাকিগুলো কিসব করিস আমার মাথা ঢুকতেছে না আমি আগে যাই খুধা লাগছে।
তৃতীয় মশা : আমি ওই পাশের মানুশটার কাছে গেলাম এর কাছে কিছুই পাওয়া যাবেনা।
এর পরেই খেয়াল করলো নন্দিতা তার হাত পা চুলকাচ্ছে। এবারো নিজেই হেসে উঠলো নূহাশ কল্পনা শক্তি তার বেশ ভালই আছে। নাহলে এইরকমভাবে কোন কাজ হয় ? নন্দিতা এখনো ফোনে কথায় বলে যাচ্ছে। নূহাশ লক্ষ করলো যে নন্দিতা প্রায় বিশ বা বাইশ মিনিট ধরে কথা বলছে। এর মাঝেই তাকে তিনবার ফোন কাটার কথা বলেছে নুহাশ ইশারায়। সকল ইশারা এর উপরে বক বক চলছেই তার। নূহাশ আসেপাশের জোড়া সং্খার ছেলেমেয়ে দের দিকে এক নজর চোখ বুলিয়ে নিলো । কেও অপরের ঘাড়ে মাথা ঠেকিয়ে বসে আছে কেও একদম কাছাকাছি বসে কথাবাত্রা বলছে। আর তারা দুজন একটু সামান্য দুরে বসে আছে মাঝেই নূহাশের চশমা আর ফোন গুলো রাখা। সেদিকে চোখ পরতেই তার এন্ড্রয়েড টা হাতে নিলো নূহাশ। এখন কিছুক্ষণ বুড়ো আংুল চালাচালি হবে। কি মনেকরেই ক্যামেরাটা অপেন করলো নিজের হাত নিচে রেখেই স্ক্রিনে একটা ট্যাপ করলো। অটো ফোকাসের কারনেই হাতের রেখাগুলো স্পস্ট হয়ে উঠলো। এখন ছেলেটা নিজের হাতের রেখা দেখছে কিসব আকাবাকা রেখা বিধাতা একে দিয়েছেন। আবার এই রেখায় নাকি ভাগ্য লেখা আছে । ভাগ্য লেখা থেকেই তার এক মজার কথা মনে পরলো।
একবার এক জ্বতিশি তার হাত দেখে বলেছিলেন ছেলেটা অমুক বছর থেকে এই এই হবে এই এই করবে কোন চিন্তা নেই। সেই বছরের স্কেল কত আগেই পার করে এসেছে কিন্তু এই এই না অই অই কিছুই সে হওয়াতে তে পারেনি। নির্দয় মানুষেরা নাকি কাঁদতে জানেনা। অধিক শোক না হলেই কখনো কান্না বের হয়না তাদেত চোখ দিয়ে। নূহাশের চোখে কখনো কান্না আসেনা। কি নিয়ে কাঁদবে সে? সেই জিনিষটাই নেই তার। হ্যা এটা ঠিক যে প্রায় প্রায় তার চোখ দিয়ে এমনি পানি পড়ে। তবে তা দুঃখে নয়। চোখের সমস্যা। ছেলেটা ক্লাস টু থেকে চশমা পড়ে। মাঝে মাঝে চশমা খুলে চারিদিকে তাকায় ঝাপসা সব ঝাপসা আবার পড়ে সব পরিষ্কার আবার খোলে ঝাপসা। এই ঝাপসার আড়ালে কতসব কল্পনা।
" চশমার আড়ালের দুঃখটা বুঝলেনা তুমি বুঝলেনা " এই কথাটাও নূহাশ প্রায় মনে মনে এক অজানা অদৃশ্য কাওকে বলে । কিন্তু সেই অদৃশ্য কারো চেহারাটা মাঝে মাঝে দেখতে পায় নূহাশ ঝাপসা অনেক ঝাপসা কিন্তু তার হাসিটুকু ঝাপসা হলেও বোঝা যায়। বিধাতা কেনো যে মানুষকে নতুন নতুন চেহারা কল্পনার ক্ষমতা দেননি এই নিয়েই আপসোস হয় নূহাশের। বড় আপসোস।
এখন নূহাশ আর নন্দিতা হাটছে। সন্ধা বিদায় নিয়েছে সামান্যই আগে। এখনো তার চলে যাওয়ার পদচিহ্ন অবশিষ্ট আছে রাতের আগমন। এখনি সবাই লাইট জালাবে, রাস্তায় রাস্তায় লাল সবুজ নীল রংবেরং লাইট দেখাযাবে। সকল দোকানের নাম জ্বলে উঠবে হরেক রকম ভাবে। কোন কোন লাইট জ্বলবে আর নিভবে। রাস্তার হলুদ রোড় লাইট সারারাত অতন্দ্র প্রহরী হয়ে আলো দেখিয়েই যাবে। ক্লান্ত শরীর নিয়ে মানুষ নিজ গৃহে গৃহপ্রবেশ করবে। হয়তো টিভিসেট এর সামনে বসবে নয়তো বাকিকাজ গুলো সারবে। রাতে নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমানো পরেরদিনের যুদ্ধের প্রস্তুতি তাদেরকেই নিতে হবে। অতপর ঘুমিয়ে পড়া কত স্বপ্ন কোনটা অনেক সুন্দর আবার কোনটা দুঃস্বপ্ন ভয়াবহ দুঃস্বপ্ন। রাতের চাদ টুকু একাই ঝুলে থাকবে এখানে চাদ দেখার জন্য কেও নেই দালানের আড়ালে একাই লুকিয়ে থাকে চাদটি সারারাত।
নূহাশ প্রায় চাদ দেখে ছাদে উঠে। এক নজরে দেখে থাকে চাদটিকে। হয়তো রাত বিরাতে নন্দিতাকে ফোন দেয় ঘুম ঘুম চোখে শুয়ে শুয়ে কথা বলে সে। কত কথা অর্থহীন সব কথাবাত্রা অহেতুক জোর করে হাসাহাসি যার কোন মানে নেই কিন্তু কি যেনো আছে কিসের জন্য তা তারা কেও জানেনা। কথাবাত্রা চলতেই থাকে। কারনহিন কথাবাত্রা।
তারা আসলেই খুব ভাল বন্ধু। ভালর চেয়ে হয়তো কয়েক লেভেলের উপরের। কারন এখন কারো সাথেই কথা বলুক বা নাই বলুক নূহাশের সাথেই কথা বলতেই হবে।
নূহাশ যদি কথা না বলে তাহলে সে নিজেই ফোন করে বলে কি ব্যাপার বউ টাকে ভুলে গেলা নাকি? সারাদিন কোন খোঁজখবর নাই? নুহাশ যদি এর বিপরিতে কথা বলে তাহলে নন্দিতা আবার বলে ঠিক আছে ঠিক আছে সব বুঝতে পারতেছি। নূহাশ বলে পরকিয়া করছি হাহ হাহ হাহ। এই কথাতে কি মনেহয় নন্দিতার তা নূহাশ হয়তো জানেনা। নিজের মাঝে হারিয়ে যাওয়া ছেলেটা কি কিছুই বোঝেনা নাকি তার নিজের জগত সম্পর্কে কাওকে জানতে দেয় না এটা বড় রহস্যের চোখে দেখে নন্দিতা। কেন রহস্য ভরা ছেলেটাকে এতোটা আপন মনে হয় তার?

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

ধন্যবাদ পোষ্ট পড়ার জন্য । আপনার মুল্যবান মন্তব্য এর আশা করছি ।

 
twitterfacebookgoogle plusrss feedemail