Social Icons

twitterfacebookgoogle plusrss feedemail

রং

-তো তুমি কি আজকেও সেই প্রথমদিনটার মত আছো ?
-হ্যাঁ । তবে এখন কিছুটা পরিবর্তন হয়েছি ।
-মনে হয় না কারন সেদিনের প্রতিবিম্ভ আমি এখনো তোমাএ মাঝে দেখি ।
-কিরকম ?
-আমায় ভালোবাসো না কিন্তু তা সরাসরি বলে কষ্ট দিতে চাও না ।
-তুমি কেনো ? আমি কাওকে কখনোই কোনভাবে কষ্ট দিতে চাই না ।
-সেটা আমি জানি । এতো নরম মনের মানুষ হয়ে সবসময় অমন গুপচি মেরে থাকো কেনো ?
-কিরকম ?
-এই ধর যে রাস্তায় হাটছো কিন্তু হুশ জ্ঞান নেই কাকে পাশ কাটিয়ে গেলে আর কাকে অভারটেক করলে ।তার উপর কানে ইয়ারফোন লাগালে মনে হয় দুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন কোন এক মানুষ ।
-আমার ওইসব খেয়াল থাকেনা মাঝে মাঝে আমি আমার বাবাকেও চিনতে পারিনা । বাবা বাসায় এসে মা কে ডেকে বলেন “ঐযে তোমার মহারাজা ছেলে বাপের সামনে দিয়ে হন হন করে হেঁটে যান আর বাআব উনারে ডাকলেও শনেন না । বলি উনি কোন জগৎ এ থাকেন উনাকে একটু বাস্তবে আসতে বল নাহলে কপালে বিপদ আছে ।
-ভয়ংকর অবস্থা ।
-অনেকটাই সেইরকম ।
-একটা সত্যি কথা বলবে ?
- বল ।
-আচ্ছা আমার মধ্যে কিসের অভাব আছে যে তোমার মনে আজকেও যায়গা করে নিতে পারিনি ?
-উম্মম চিন্তা করে বলতে হবে হুহ ।
-ঐরকম হুহংকার না দিয়ে বলে ফেলো ।
-ওকে ডিরেক্টলি না ইনডিরেক্টলি ?
-একদম ডিরেক্টলি ।
-তোমার মধ্যে অভাবের অভাব আছে ।
-অভাবের অভাব ? মানে কি ?
-যার সবকিছুই পুর্ন্য থাকে তারই অভাব নামক জিনিষটার অভাব থাকে ।
-আচ্ছা আমরা কি আর একবার দেখা করতে পারি ?
-কিজন্য ?
-সেটা তুমি অনেক ভালোমত জানো তাই একবারের জন্য প্লিজ আমাকে যখন যেখানেই ডাকবে আমি যাবো । তবুও একবার ।
-হবেনা ।
-অন্তত আমার জন্য একবার মাত্র আর কখনো নয় । কখনোই করবোনা ।
-আমাদের মাঝে আরো কিছু কি বাকি আছে ?
-মানে ?
-আমি তোমাকে সব তো ফাইনালি বলে দিয়েছিলাম আমার থেকে দূরে সরে যাও ।
-আমি চাই । কিন্তু আর একটা বার মাত্র । একটা বার প্লিজ ।
টূট.. টূট... টূট …...
হুটকরে ফোন কাটার এই শব্দটা পেয়ে হৃদির ভেতর থেকে অসীম দুঃখের একটা কান্না ঠেলে বের হয়ে আসতে চাইলো । হটাৎ করে পায়ে যাওয়া কান্না লুকানো সাধারনত একটু কঠিনই হয়ে পড়ে । হয়তো পাশে কেও টের পেয়ে যাবে এই ভয়েই যত দ্রুত সম্ভব মুখ অন্য দিকে ঘুরিয়ে রাখতে হয় কিংবা নিচু করে রাখতে হয় মাথাটি । অন্তত একবার চেয়েছিলো ছেলেটা আবারো একটাবার দেখা করুক । অর সব কথাই মেনে নিতো । শুধুমাত্র শেষ একবার ওর সাথে ঘুরে আসুক । হৃদি একবার ওকে চিৎকার করে বলুক “ অনেক ভালোবাসি তোমাকে । অনেক অনেক ভালোবাসি ।“ চেয়েছিলো ছেলেটা একবার হৃদির হাত নিজের হাতে ধরে অনেক্ষন ধরে ধরে থাকুক । কিংবা পকেট থেকে এক টুকরা কাগজে লিখে আনা কোন কবিতা বের করে তা হৃদিকে উদ্দেশ্য করে পড়ুক । কখনো সুন্দর করে সেজে এসে “ নিজেকে কেমন লাগছে ? “ এ কথা হৃদি জিঙ্গেস করলে ছেলেটা যেনো আবারো বলে উঠুক “ লিপস্টিকটা একটু বেশিই ডলা হয়ে গেছে । আর মনেহয় আটা ময়দার দামটা আরেকদফায় বাড়লো “ । কিন্তু হৃদি কি অন্তত আর একবার এসব পাবে ? ভালোবেসেছিলো বলেই কি আর একবার এসব পাওয়া তার উচিৎ নয় ? এসব মনে করেই হৃদি কাদঁছে । মুখে একটা বালিশ চাপা দিয়ে শব্দটা কমিয়ে নিচ্ছে । আবারো কাঁদছে সেই বালিশ ভেজা কান্না ।
খুব যত্নে একটা নীল শাড়ী পড়া একটা মেয়ে গাড়ি থেকে নেমে ড্রাইভারকে বললো “ সোজা বাসায় চলে যাবেন কোন ডান বামে তাকাবেন না । নো হেংকি পেংকি বলে দিচ্ছি । “ এই বলেই চারিদিকে একবার নজর বুলিয়ে নিলো । নেই । একটা ফাঁকা জায়গায় গিয়ে বসে পড়লো সে । এটা প্রথম নয় আগেও অনেকবার এরকম অপেক্ষা করেছে মেয়েটি । বেনিফিট শুন্য । অদুরে মেয়েটি যেখানে বসেছে তারই রাস্তার উলটা পাশে এক চায়ের দোকানের কোনায় ডান হাতে মোবাইল আর বাঁ হাতে চায়ের কাপ । ফোনের স্ক্রিনে হৃদির নাম এবং ফোনটা বাজছে । আজ হৃদির জন্মদিন । এদিনে সবারই সবকিছু নতুন মনে হয় । একটু বেশিই দেরি করে ফেলেছিল উঠতে মেয়েটা । কিন্তু উঠেই ফোনে দেখলো অর্নবের একটা ছোট্ট ম্যাসেজ । “ বিকেলে টি এস সি তে আসিও । একা আসবে আর একটা নীল শাড়ী পড়ে আসবে । আর আমরা যেখানে বসতাম সেখানে থাকবে ।“ ছেলেটা কখনো হৃদিকে কোন খানে কোন স্পেশাল পোষাকে ডাকেনি । কিংবা চোখে চোখ রেখে কখনো কথা বলেনি । সবসময় অন্যদিকে তাকিয়েই কথা বলতো যদিও তারা পাশাপাশি বসে থাকে । ছেলেটি প্রথমবারের মত একটা সাদা পাঞ্জাবী পড়ে এসেছে এবং যথারিতি জিন্সের প্যান্ট ।
এখন হৃদি আর অর্নব হাটছে । রাস্তার ল্যাম্পোস্টের আলোয় হৃদির হাতগুলোও হলুদ বর্ন ধারন করেছে । মেয়েটা মাথা নিচু করে হাটছে । অর্নব কোন কথা বলছে না । অন্যদিন ফটকরে বলে উঠতো “ চল উলটা পথে হাঁটা ধরি” কিন্তু আজকে তারা হাটঁছেই উল্টাপথে । উদ্দেশ্যহীন ভাবে হাটাহাটি । অর্নবের অচ্ছে করছে পকেট থেকে একটা বেনসন বের করে ধরাতে । কিন্তু সবসময় সবকিছু করা যায় না এখন সিগারেট টা জ্বালাতে গেলে হৃদির হাতটা ছেড়ে দিতে হবে সেটা অর্নব চায় না । আজ হৃদির সব কটা ইচ্ছেই পুরন হয়েছে । নিজের ঠোঁটের পুরো লিপস্টিক মুছে ফেলেছে অর্নবের কথায় । আজ প্রথমবারের মত অর্নব বলেছে লিপস্টিকহীন ঠোঁটেই হৃদিকে সুন্দর লাগে । অর্নব আবারো বলেছে “ যদি কখোনো কাওকে বিয়ে টিয়ে করি তাহলে তাকে এই নীল রঙের শাড়ীতেই বাড়িতে উঠাবো ।“ সাথেই হৃদির ডান হাতটা ধরে আগের মতন চুপটি করে বসেছিলো ছেলেটা হৃদিও নিশ্চুপ । হটাৎ কি যেনো হল হৃদি চিৎকার করে উঠলো অর্নবের উদ্দেশ্যে “ অনেক ভালোবাসি তোমাকে অর্নব অনেক অনেক বেশি “ বলেই মুখ লুকালো । অর্নব এটার জন্য প্রস্তুত ছিলো না তার হতচকিত হয়ে চারদিকে দেখলো অনেকেই হৃদির পাগলামীর জন্য তাদের দিকে তাকিয়ে আছে । আবার কেও কেও ফ্যাল ফ্যাল করে হাসছে । তারপর থেকেই অর্নব আর হৃদি সেখান থেকে উঠে হাটা ধরেছে । হৃদির ইচ্ছে আজ তারা সারারাত হাটুক কিন্তু অর্নব তাতে রাজি হবেনা ।
-হৃদি ।
-বলো ।
-এখন বাসায় যাও ।
-না ।
-বাসায় যাবে তুমি এখন । আমি রিকশা ডাকছি ।
-আর একটু পর ।
-নাহ । এখনিই রাইট নাও ।
-আমাকে আর ভালো লাগছে না ?
-বাজে কথা বলিও না যেটা বলেছি সেটা কর ।
এরপর হৃদিকে একটা রিকশায় উঠিয়ে দিয়ে নিজের বাড়ির পথে হাঁটা ধরলো অর্নব ।
হৃদি মেয়েটা চুপ চাপ বসে আছে তার ঘরের আয়নার সামনে । নিজের চোখে চোখ মেলাতে পারছে না । নিজের চোখ দেখলেই অর্নবের কথা মনে পড়ছে । উঠেগিয়ে ঠাশ্ করে ঘরের লাইট টা অফ করে বিছানায় গা এলিয়ে শুইয়ে পড়লো মেয়েটা । টেবিলের উপড়থেকে ফোন বাজছে পর পর দু তিনবার বাজার পর সেটা হাত বাড়িয়ে রিসিভ করে বলে উঠলো
-হ্যালো ।
-(ওপাড় থেকে গভীর গলায় ) কি বিজি ?
- যদিও ফোনটা ধরা উচিত্‍ ছিলো না ।
-ইয়েস ।
-কিছু বলবে ?
- উমমম হু ।
-কি বলবে বলো ।
- ইয়ে আগে দেখোতো কয়টা বাজে ?
-মানে ?
-আরে সময় কত ?
-বারোটা বাজে ।
-আহারে বারোটা পার হইছে ?
-না দুমিনিট বাকি আছে ।
- (কিছুক্ষন চুপ থেকে) হ্যাপি বার্থডে হৃদি ।
-এটা কি উইশ করার সময় দিনটা পারই তো হয়ে গেলো । আর এখন দিচ্ছ ?
- আমি তোমার জন্মদিনের প্রথম উইশার না হলেও যেন একদম শেষের টা হই।
- পাগলামি না ?
- নাহ ভালোবাসি ।
- বাসোনা জানি ।
-আরে বাসিরে ।
- আমি এখন বাসিনা ।
- আচ্ছা !
- কি আচ্ছা ?
- কিছু না । কালকে দেখা করবে আরেকবার ?
-না ।
-পড়শু ?
-না ।
- তাহলে শুক্রবার ?
-না ।
-তাহলে কবে ?
-কখনো করবোনা আর ।
-এবার আমি চাচ্ছি । প্লিইইইইইইইজ ।
-না সাহেব ।
-প্লিজ প্লিজ প্লিজ শোনোওওও….
টূট... টূট.... টূট......

সুইসাইডাল নোট

রিয়া অতি সাবধানে তার নিজের লেখা সুইসাডাল নোট টি তার টেবিলের ড্রয়ারে রাখলো । এই কাজ টা সে আজকাল প্রতিদিনই করছে । প্রতিদিন নতুন নতুন মরার আইডিয়া নিয়ে একটা ইমশোনাল ভরা চিঠি লিখে আবার পরের দিন সেটা নিজেই ছিড়ে ফেলে । আজকের কথাটা ভিন্য হতে পারতো আজকে তার হাতে মোক্ষম সুযোগ আছে । হাতের কাছে একটা র‍্যাট পয়জন যেটার সোজা বাংলায় ইদুঁর মারা বিষ আছে । সে শুনেছে এটা খেয়ে বেশ কয়েকজনই মরেছে । কিন্তু রিয়ার মরার চান্স নেই কারন সে জানে যে তাকে সেটা খেতে বলছে সে নিজেই চায়না রিয়া মরুক । আরেকটা আইডিয়া রিয়ার মাথায় এসেছে হাতের রগ কেটে মরা কিন্তু রিয়া সেরকম কাটাকাটি করতে পারবেনা । একবার সে রাগ করে হাতে ব্লেড ধরেছিলো কিন্তু টান দিতে পারেনি । সামান্য হাত কাটতে পারবেনা যে মেয়েটা সে কিভাবে রগ কাটার এই চরম কাজটার সাহস নিবে ? হমম আরেকটা আছে ঘুমের অসুধ । বেশ কয়েকটা খেয়ে ফেললে ?
কিন্তু আজকাল সেই সুগার ফ্রী ট্যাবলেট খেয়ে মরার চান্স একদম নেই । মনে মনে একতাল খাটি বাংলা গালি দিলো অসুধ কম্পানীগুলাকে । এমন অসুধ বানায় না তারা যে একটু শান্তিমত মরতে পারবে । রিয়া এখন চিন্তা করতেছে যে কি কি মিশিয়ে খেলে মৃত্যূ অনিবার্য প্রথমে বেশ কিছুটা র‍্যাট পয়জন খেয়ে তারপরই ঘুমের অসুধ খাবে এতে তার ঘুম পাবে এবং বিষের কারনে সে মারা যাবে । নাহলে সে কিছু পটাসিয়াম সায়ানাইট কিনে আনতে পারবে এতেই কাজ শেষ ।
- রিয়াপু ও রিয়াপু
রিয়ার চিন্তার সুতায় ছেদ পড়লো পিচ্চি রায়হানের ডাকে । সময় অসময় এই ভয়ংকর টা এসে টপকাবে।
এখন তাকে তার দরজাটা খুলতে হবে এরপর হাসি মুখে আদর করতে হবে । মাঝে মাঝে এই পিচ্চি টা রিয়ার ল্যাপটপের কিবোর্ডের সুইচ গুলাকে মনে করে পিয়ানো বাজানোর মোক্ষম জিনিশ এবং সাথেই ঝড়ের গতিতে মাশাল্লাহ দুই হাতে ধাম ধাম করে
তার সংগীত চর্চা করবে। গান সে গাইতে পারে তাও কয়েক্টা থেকে মিলিয়ে ঝুলিয়ে
" এক আকাশের তারা তুই একা গুনিসনে গুনতে দিস তুই কিছু মোরে ও পিয়া ওপিয়া তুমি কোথায় ? ..........."
-রিয়াপু রিয়াপু রিয়াপু! !!
-হু বল। ( দরজা খুলে)
-আইলাবু ।
এটা রিয়া নিজেই শিখিয়েছিলো পিচ্চিটাকে । আজ সেটাই শুনে তার মাথা গরম হয়ে উঠলো । হয়তো পিচ্চিটার গালে কষে একটা থাপ্পড় দিলে একটু শান্তি পেতো । কিন্তু সে মাথা ঠান্ডা রাখে বললো ।
-কি চাই?
-গেম ।
- গেম নাই কম্পিউটার নষ্ট।
- কালকেই তো ছিলো ।
-আজকে নেই।
-না আয়ায়ায়ায়া
-কি? চেচাস কেন?
-গেম দাও।
-নাই তুই এখন ডোরেমন দেখ যা। কালকে আসিস।
-না।
- উহহ আয় তোর সব গেম আজ বাহির করবো।
এরপর দরজা থেকে সরে যেতেই পিচ্চি রায়হান কে দেখা গেলো দৌড়ে ঘরের ভিতর ঢুকে পরিচিত হাতে রিয়ার ল্যাপটপ অন করতে।
এবং অন করে রিয়ার দিকে একবার তাকিয়ে বলে রিয়াপু খেলবোনা বলেই দে ছুট । সেটা দেখে রিয়ারো একটু আপসোস হচ্ছিলো কারন রায়হান মাত্র তিন বছরের একটা পিচ্চি এর মাঝেই তার সব গেম মুখস্থ । কিন্তু সে রিয়ার আজকের মন মানুষিকতার সাথে পরিচিত না । শুধু শুধু রাগী স্বরে কথাবলে পিচ্চিটার মন ছোট করে দিলো ।
রিয়া আবার ফিরে এলো তের আগের চিন্তায় । মানুষের পক্ষে নতুন চিন্তা হতে আগের চিন্তায় ফিরে আসা মানেই হয়তো সে কোন দুঃচিন্তায় আছে কিংবা সে আসলেই ভীশন দুঃচিন্তায় আছে । রিয়ার এখন নিজেকে ক্ষতবিক্ষত করতে ইচ্ছে করছে । রিয়ার আজ সিরিয়াস রকমের মন খারাপ । একসময় লেখক হুমায়ূন আহমেদ এর "অনিল বাগচীর একদিন" বইয়ে পড়েছিলো " মন বিগড়ে গেলে শরীরকে কষ্ট দিয়ে মন ঠিক করতে হয় " । রিয়ার এখন সেই লাইনটা তার মাথায় এন্টিক্লকও্যাইস ঘুরছে ।
রিয়া এখন হাসপাতালে । মাথায় এবং হাতে প্রচন্ড ব্যাথা । কিভাবে এলো তা সে জানেনা । হটাঠ চোখ খুলে দেখল সে হাসপাতালে । কিচ্ছুক্ষন মনে করছে কি কি করেছে সে ? । সব মনে পড়েছে তার । কালকে সে কাঁদতে কাঁদতে সেই র‍্যাট পয়জন টা পুরোটাই খেয়েছিল যদিও সেটা খেয়ে বমি এসে পড়ছিলো তার সাথেই বের করে রাখা সেই সুগারফ্রী কড়া ঘুমের অসুধ ডজন খানেক খেয়ে একগ্লাস পানি খেয়েছিলো । রিয়া দেখলও তার মাথায় একটা ব্যান্ডেজ কিন্তু সেটার ঘটনা সে জানেনা ।
- প্রিয়ে
রিয়ার বালক বন্ধু এখন তার সামনে । এবং শয়তানটা রিয়ের এই পরিস্থিতিতেও দাঁত ক্যেলিয়ে হাসছে । রিয়াও অন্যদিকে ঘুরে জবাব দিল যদিও সে কোন কথা বলতে চাচ্ছিলো না কিন্তু কি করে যে বলে উঠলো ' হু ' । হয়ত বা অভ্যাস বসত ভুলে ।
- আপনি আজকাল কি কুংফু পান্ডা ওস্টাদকে ফলো করতেছেন নাকি ? সাথে সেই ডিস্কভারি চ্যানেলের বিয়ার গেইলস গুরুকেও ?
- মানে ?
- আজকাল ইঁদুরের সাথে মিল মহাব্বত লাগিয়েছ তাদের দেয়া খাবার খাচ্ছো আবার কুংফু করে মাথাটার তেরোটা বাজিয়ে দিলে ভাগ্যিস চৌদ্দটা বাজাওনি ।
- বাজে কথা বলিও না । কিছু বলার থাকলে বল নাহলে সামনে থেকে যাও ।
- ( রিয়ার কাছে এসে )
এই বুড়ি কি হয়েছে তোর ?
- কিছুনা ।
- তাহলে ওদিকে তাকিয়ে আছিস কেন ?
- ইচ্ছে করছে ।
- এতো ইমোশন কেন রে তোর ? আমার সেই সামান্য কথায় তুই এমন করলি ?
- ( রিয়া চুপ করে আছে সাথে তার চোখ জলে ভরে উঠছে )
- তোকে এততা কষ্ট দেয়া ঠিক হয়নিরে । আমাকে ছাড়িস না আমার মতন কাওকে পাবিনা ?
- তুমি একটু বাহিরে যাবে ?
- হু যাচ্ছি । আরে আরে আরে আরে কাঁদছিস কেনো ? এখোনো তো রোমান্টিক ডায়লগ গুলো ঝাড়াই হয়নি । এতেই ? আচ্ছা যাচ্ছি । ত হাতটা ছাড় ।
এ বলে নাফিস যখনি হাত টা ছড়িয়ে নিতে যাচ্ছিল রিয়া তখন রিয়া নাফিস্কে ধরে হু হু করে কাঁদতে শুরু করলো ।
- রিয়ারে আমি চাইনি তোকে এমনকরে কষ্ট দিতে ।
- তো কেনো দিলে ?
- পেতে হয় মাঝে মাঝে এমন কষ্ট না পেলে কি ভালোবাসা জমে ? তুমতো জানতেহি হোগি ।
- ( রিয়া চুপ )
- তোর সুইসাইডাল নোট টা পড়েছি ভালই লেগেছে কিন্তু তুই দূটো বানান ভুল করেছিস । এরকম আবেগের জিনিশে বানান ভুল করলে কি চলবে ? হু ।
নাফিসের কথা শুনে রিয়া কাঁদতে কাঁদতেও হেসে ফেললো । পাগলটাকে কি আর এমনিই এতটা ভালোবাসে সে ?

তুলশী

এই প্রথম নন্দিতার মুখে আসল হাসিটুকু। পিওর হাসি যেতাকে বলে। রাত নয়টা বেজেছে সময় দেখলো ও। মনে মনে দিন গুলোর গননা করে ফেলছে এসময়। এক দুই তিন, একমাস দুমাস ছয়মাস একদম পাক্কা এক বছর। এক দিন যদি চব্বিশ ঘন্টা বা চৌদ্দশত এর অধিক মিনিট হয়। একবছর তাহলে হবে....
হিসেব এর মাঝেই ডুবে আছে মেয়েটা। আনগুলে হিসেব চলছেই। পাসেই ফুতপাতে বসে বসে তাই দেখছে নূহাশ । এক মুহুর্ত কি যেন মনে পড়েগেল ছেলেটার। মুখে হাসির হালকা চাদ উদয় হল নুহাশের। অবাস্তব ধৈয্যের এর অদ্ভুত ক্ষমতা আছে তার। নুহাশ বসে আছে কখন নন্দিতার ফোনে কথা শেষ হবে এর জন্য। নন্দিতার ফোন কল কাটা হয়েছে বেশ কিছুকাল আগে মেয়েটা কিসের যেন হিসেব করছে। হাতের আনগুলে গোনাগুনতি দেখেই বুঝে নিল সে। তবুও ডাকছে না ও নন্দিতাকে। এইসময় নন্দিতাকে কার সাথে তুলনা করা যায় তা নিয়েই ব্যাস্ত হবার চেস্টা করছে সে।
দুবার কাশি দিলো বেশ জোরে সরেই দিলো নুহাশ অনেকটা অভিনয় করেই। নন্দিতার আনগুলে হিসেব চলছেই। এক বছর বারো মাস, তিনশো পয়সট্টি দিন, পাচলাখ পঁচিশ হাজারের বেশি মিনিট , তিন কোটি পনের লক্ষ ছত্রিশ হাজার সেকেন্ডের মত অনেকটা সময়।
গতকালকেই সব প্লান করেরেখেছে নূহাশ আজ বিকেলে নন্দিতাকে নিয়ে বের হবে। প্রথমে যাবে ইবনেসিনা হাসপাতালে ঢানমন্ডি তে। সেখানের কাজ সেরে হেটে হেটে রবিন্দ্র সরবরে যাবে। তারপর কিছু গল্প আড্ডা। নন্দিতার কথা নূহাশ তার বন্ধুদের বলেছে একবার না দেখা করালেই নয়। আজকেই দেখা করাবে নন্দিতাও তাই চেয়েছিলো। প্লান মতাবেক ইবনেসিনা তে কাজ সেরে তাদের আড্ডার যায়গায় গেল তারা বিকেলে। কয়েক্টা দিন নন্দিতা কি সব বলবে বলবে বলছে কিন্তু সম্পুর্ন ভাবে বলতে পারছে না । অতীতের কথা কিছু মিস্রিত কিছু গল্পকথা। জিবন বই এর কয়েকটা পাতা। নূহাশ খেয়াল করল আজ নন্দিতার ফোনে বেশ কয়েকটা ফোন এসেছে এবং অনেক দির্ঘ্য সময় ধরে কথাবাত্রা হচ্ছে। এখানে বসার পরও তাদের অখাদ্য পুর্ন্য কথাবাত্রা দুলাইন বলা হয়নি এর মাঝেই আবার ফোন। নূহাশ বসেই আছে নন্দিতার পাশে। অপেক্ষা। নূহাশের মাথায় একটা লাইন ঘুরছে " অপেক্ষার প্রহর মিষ্টি কিন্তু এর স্বাদ তিতা " সেই তিতা স্বাদ নিয়েই যাচ্ছে নূহাশ। মিস্টি টাইপের তিতা।
নন্দিতা না চেয়েও কথা বলে যাচ্ছে। নিছক ভাবে কাকে ধন্যবাদ দিচ্ছে। আর পায়ের উপর পা তুলে ঝাকাচ্ছে। সকাল থেকে এই পর্যন্ত ত্রিশটার উপড় ফোন এসেছে। মাথাটাও ব্যাথা করতেছে নন্দিতার। এক ফাকে নূহাশকে দেখলো মাথা নিচুকরে কিযেনো দেখছে। ছেলেটা সাধারন এক জিনিশ নিয়ে অদ্ভুত সব করতে পারে। এখন সে মাথা নিচুকরে মানুষের পা দেখছে। সে প্রায় এক কথা বলে সুন্দর পা ওয়ালা মেয়ে তার অনেক পছন্দ। এই কথাটা মনেপড়ার সাথেই নিজের পা দেখলো নন্দিতা। নন্দিতার পা কি কখনো নুহাশ দেখেছে ? কিভাবে দেখেছিলো? তার পা বিষয়ক গবেশনায় আমার ফল কি? এই চিন্তাটা এক মুহুর্তের জন্য আসল তার মাথায় এইসব চিন্তার মাঝেই সে দশ সেকেন্ড ডুবেছিলো ফোনের ওপারে কার কি কথায় হুস ফিরলো । আবার কথা চলতে থাকলো নূহাশের অজানা কারো সাথে। নূহাশ এখনো নিচের দিকে তাকিয়েই আছে ।
কানের কাছে মশার গান শুনতে পেল নূহাশ। কল্পনাবলে তাদের কথা বোঝার চেস্টা করছে ও ।
তাদের কথা বাত্রা এইরকম
প্রথম মশা : কিরে ব্যাটারা খালি গান শুনাবি নাকি পেটে কিছু খাদ্য পড়বে?
দ্বিতীয় মশা : আরে তোরা বাকিগুলো কিসব করিস আমার মাথা ঢুকতেছে না আমি আগে যাই খুধা লাগছে।
তৃতীয় মশা : আমি ওই পাশের মানুশটার কাছে গেলাম এর কাছে কিছুই পাওয়া যাবেনা।
এর পরেই খেয়াল করলো নন্দিতা তার হাত পা চুলকাচ্ছে। এবারো নিজেই হেসে উঠলো নূহাশ কল্পনা শক্তি তার বেশ ভালই আছে। নাহলে এইরকমভাবে কোন কাজ হয় ? নন্দিতা এখনো ফোনে কথায় বলে যাচ্ছে। নূহাশ লক্ষ করলো যে নন্দিতা প্রায় বিশ বা বাইশ মিনিট ধরে কথা বলছে। এর মাঝেই তাকে তিনবার ফোন কাটার কথা বলেছে নুহাশ ইশারায়। সকল ইশারা এর উপরে বক বক চলছেই তার। নূহাশ আসেপাশের জোড়া সং্খার ছেলেমেয়ে দের দিকে এক নজর চোখ বুলিয়ে নিলো । কেও অপরের ঘাড়ে মাথা ঠেকিয়ে বসে আছে কেও একদম কাছাকাছি বসে কথাবাত্রা বলছে। আর তারা দুজন একটু সামান্য দুরে বসে আছে মাঝেই নূহাশের চশমা আর ফোন গুলো রাখা। সেদিকে চোখ পরতেই তার এন্ড্রয়েড টা হাতে নিলো নূহাশ। এখন কিছুক্ষণ বুড়ো আংুল চালাচালি হবে। কি মনেকরেই ক্যামেরাটা অপেন করলো নিজের হাত নিচে রেখেই স্ক্রিনে একটা ট্যাপ করলো। অটো ফোকাসের কারনেই হাতের রেখাগুলো স্পস্ট হয়ে উঠলো। এখন ছেলেটা নিজের হাতের রেখা দেখছে কিসব আকাবাকা রেখা বিধাতা একে দিয়েছেন। আবার এই রেখায় নাকি ভাগ্য লেখা আছে । ভাগ্য লেখা থেকেই তার এক মজার কথা মনে পরলো।
একবার এক জ্বতিশি তার হাত দেখে বলেছিলেন ছেলেটা অমুক বছর থেকে এই এই হবে এই এই করবে কোন চিন্তা নেই। সেই বছরের স্কেল কত আগেই পার করে এসেছে কিন্তু এই এই না অই অই কিছুই সে হওয়াতে তে পারেনি। নির্দয় মানুষেরা নাকি কাঁদতে জানেনা। অধিক শোক না হলেই কখনো কান্না বের হয়না তাদেত চোখ দিয়ে। নূহাশের চোখে কখনো কান্না আসেনা। কি নিয়ে কাঁদবে সে? সেই জিনিষটাই নেই তার। হ্যা এটা ঠিক যে প্রায় প্রায় তার চোখ দিয়ে এমনি পানি পড়ে। তবে তা দুঃখে নয়। চোখের সমস্যা। ছেলেটা ক্লাস টু থেকে চশমা পড়ে। মাঝে মাঝে চশমা খুলে চারিদিকে তাকায় ঝাপসা সব ঝাপসা আবার পড়ে সব পরিষ্কার আবার খোলে ঝাপসা। এই ঝাপসার আড়ালে কতসব কল্পনা।
" চশমার আড়ালের দুঃখটা বুঝলেনা তুমি বুঝলেনা " এই কথাটাও নূহাশ প্রায় মনে মনে এক অজানা অদৃশ্য কাওকে বলে । কিন্তু সেই অদৃশ্য কারো চেহারাটা মাঝে মাঝে দেখতে পায় নূহাশ ঝাপসা অনেক ঝাপসা কিন্তু তার হাসিটুকু ঝাপসা হলেও বোঝা যায়। বিধাতা কেনো যে মানুষকে নতুন নতুন চেহারা কল্পনার ক্ষমতা দেননি এই নিয়েই আপসোস হয় নূহাশের। বড় আপসোস।
এখন নূহাশ আর নন্দিতা হাটছে। সন্ধা বিদায় নিয়েছে সামান্যই আগে। এখনো তার চলে যাওয়ার পদচিহ্ন অবশিষ্ট আছে রাতের আগমন। এখনি সবাই লাইট জালাবে, রাস্তায় রাস্তায় লাল সবুজ নীল রংবেরং লাইট দেখাযাবে। সকল দোকানের নাম জ্বলে উঠবে হরেক রকম ভাবে। কোন কোন লাইট জ্বলবে আর নিভবে। রাস্তার হলুদ রোড় লাইট সারারাত অতন্দ্র প্রহরী হয়ে আলো দেখিয়েই যাবে। ক্লান্ত শরীর নিয়ে মানুষ নিজ গৃহে গৃহপ্রবেশ করবে। হয়তো টিভিসেট এর সামনে বসবে নয়তো বাকিকাজ গুলো সারবে। রাতে নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমানো পরেরদিনের যুদ্ধের প্রস্তুতি তাদেরকেই নিতে হবে। অতপর ঘুমিয়ে পড়া কত স্বপ্ন কোনটা অনেক সুন্দর আবার কোনটা দুঃস্বপ্ন ভয়াবহ দুঃস্বপ্ন। রাতের চাদ টুকু একাই ঝুলে থাকবে এখানে চাদ দেখার জন্য কেও নেই দালানের আড়ালে একাই লুকিয়ে থাকে চাদটি সারারাত।
নূহাশ প্রায় চাদ দেখে ছাদে উঠে। এক নজরে দেখে থাকে চাদটিকে। হয়তো রাত বিরাতে নন্দিতাকে ফোন দেয় ঘুম ঘুম চোখে শুয়ে শুয়ে কথা বলে সে। কত কথা অর্থহীন সব কথাবাত্রা অহেতুক জোর করে হাসাহাসি যার কোন মানে নেই কিন্তু কি যেনো আছে কিসের জন্য তা তারা কেও জানেনা। কথাবাত্রা চলতেই থাকে। কারনহিন কথাবাত্রা।
তারা আসলেই খুব ভাল বন্ধু। ভালর চেয়ে হয়তো কয়েক লেভেলের উপরের। কারন এখন কারো সাথেই কথা বলুক বা নাই বলুক নূহাশের সাথেই কথা বলতেই হবে।
নূহাশ যদি কথা না বলে তাহলে সে নিজেই ফোন করে বলে কি ব্যাপার বউ টাকে ভুলে গেলা নাকি? সারাদিন কোন খোঁজখবর নাই? নুহাশ যদি এর বিপরিতে কথা বলে তাহলে নন্দিতা আবার বলে ঠিক আছে ঠিক আছে সব বুঝতে পারতেছি। নূহাশ বলে পরকিয়া করছি হাহ হাহ হাহ। এই কথাতে কি মনেহয় নন্দিতার তা নূহাশ হয়তো জানেনা। নিজের মাঝে হারিয়ে যাওয়া ছেলেটা কি কিছুই বোঝেনা নাকি তার নিজের জগত সম্পর্কে কাওকে জানতে দেয় না এটা বড় রহস্যের চোখে দেখে নন্দিতা। কেন রহস্য ভরা ছেলেটাকে এতোটা আপন মনে হয় তার?

স্বর্ণ লতা

ওপেনার টা দিয়ে স্প্রাইটের
ঢাকনাটি খুলতেই কার্বনডাই অক্সাইডের
বুদবুদের শব্দ পাওয়া গেলো ।
বিজয়ীর ভঙ্গিতে হাসিদিয়ে ওটা ইতির
দিকে এগিয়ে দিলো অন্বয় ।
আধঘন্টা ধরে ঝিমমেরে বসে আছে ইতি ।
এবার একটা ভয়ঙ্কর চাহনি দিয়ে চোখ
সরিয়ে নেয়া ছাড়া কিছুই করলোনা ।
আসলেই এই গাধাটাকে নিয়ে অনেক
বিপদে পড়েছে ও । সময় অসময় নেই সবসময়
ইয়ার্কি । রাতে ফোন দেবে বলবে বেগাম
আজকাল
শরীরটা ভালো যাচ্ছেনা ইয়েটা ডালের
কাছাকাছি বসতেই ঢুশ !!
এত কেমন করে পারে ও । একটা কমনসেন্স নেই
। এখন স্ট্র দিয়ে ফু দিচ্ছে স্প্রাইটের
বোতলে কি বিচ্ছিরি । কোন
রেস্টুরেন্টে গেলে ওয়েটারের
সাথে কয়েকপলকে ভাব কয়ে ফেলে এমন
অবস্থা যে ওয়েটার তার
বাচ্চাকালথেকে দোস্ত ।
- এই একটু থামতো কি করতেছ এটা ?
- উ কিছুনা
কিছুনা বলেই আবার শুরু করলো । ইতির
ইচ্ছে করছে যে উঠে চলে যায় । কিন্তু কিছু
জরুরী কথা ছিলো অন্বয়ের সাথে । অন্বয়
হয়তো জানে কিন্তু এখনি সব ক্লিয়ার
করা উচিত্ ।
- আমি উঠতে চাচ্ছি চলো ।
- এত জলদি ?
এখনি তো ধনিয়া ( রেস্টুরেন্টে খাবারের
পরে যেটা দেয় খেতে বাটিতে এনে )
গুলোই তো শেষ হলোনা ।
- আচ্ছা খেয়ে দেয়ে ঘুমিয়ে নিও
এখানে আমি যাচ্ছি ।
এইবলার পরে ইতি চলে যাওয়ার জন্য
উঠেছে অন্বয়
ধনিয়াগুলো টিসুপেপারে ঢেলে নিয়ে উঠলো ।
দশ টাকা ওয়েটারের সাতে দিয়ে ইতির
সাথে বেরিয়ে পড়লো । আকাশে মেঘমেঘ
ঘড়িতে সাড়ে এগারোটা একটা রিকশা নিয়ে অন্বয়ের
সাথে যাচ্ছে ও জিয়া উদ্যানে ।
সেখানেই আজকে সব ক্লিয়ার করার
কথা মনে করেছিলো ইতি ।
আজ সব বিল ভাড়া ইতি দিয়েছে ।
রিকশা ওয়ালাকে ২০ টাকার একটা নোট
দিয়ে হাটা শুরু করলো ।উদ্যানের দিকে আর
গেলোনা আর সংসদ ভবনের পাশে রাস্তার
ফুটপাতে বসলো তারা ।
ফুটপাতটি রাস্তা থেকে উচু এবং বসার মত
জায়গা । আশেপাশে কিছু
জুটি বসে আছে একই রকম করে । দুরে ৩ জন
পুলিশকে দেখা যাচ্ছে ।
বলা শুরু করলো ইতি
- তুমি জানো তবুও কিছু বিষয়
এখনি বলে ফেলা উচিত্ । আমি আর
পারতেছি না । তুমি কি করছো ? এত
কমনসেন্স হীন কেমন করে হও তুমি ? আমি আর
পারছিনা । আমাদের সবকিছুর এখানেই শেষ
করা উচিত্ । আর আমি চাই তুমি আমার
থেকে অনেকটা দুরে যাও । আমি তোমার মুখ
আর দেখতে চাইনা । এখন কি বলবে বলো ।
একটু দমদিলো ইতি ।
কৃষ্ণচুড়া গাছের লাললাল ফুলের
দিকে তাকিয়ে ছিলো অন্বয় ।
ওদিকে তাকিয়েই বললো তুমি কি অন্য
কাওকে পেয়েছ ?
- না
- ও আচ্ছা । তা আমার কোন অন্য দায়িত্ব ?
- নেই ।
- আচ্ছা একটা জিনিষ তোমার
কাছে জানার ছিলো ।
- বলো ।
- ব্রেক আপের সময় কি বলতে হয় ?
- ভালোবাসা শুরুর একটা নির্দিষ্ট
ভাষা আছে । ব্রেক আপের নেই ।
- আচ্ছা একটা কথা রাখবে ?
- বলো ।
- আজকে একটু আমার সাথে ভিজবে আর একটু
পরে বৃষ্টি আসবে ?
- তুমি কিভাবে জানো একটু
পরে বৃষ্টি আসবে ?
- আমি জানি । ভিজবে একটু ?
ঠিক এইসময় বুকটা মোচড় দিয়ে উঠলো ইতির ।
তার ইচ্ছে করছে জোর গলায় একটু কেদে নিক
সে । এই সময়েই বৃষ্টিটা শুরু হলো ।
সিনেমাটিক
ভাবে বৃষ্টিটা কে এভাবে আসতে হবেই
এখন ? চারিদিকে ছুটোছুটি শুরু হয়েছে ।
রিকশা গুলো ঝড়ের
গতিতে চালানো হচ্ছে ।
আর
থাকতে পারলোনা ইতি থামাতে পারলোনা অশ্রুটাকে অঝরে কেদে উঠলো সে ।
অন্বয় এসময় ইতির ডানহাতটি ধররো ইতির ।
তার চোখেও জল । এই বৃষ্টির মাঝেও
ইতি তা দেখতে পেলো ।
ইতি জড়িয়ে ধরলো অন্বয়কে ফুপিয়ে কাদছে সে ।
অতীত গুলো মনে পড়ছে তার । এসময় অন্বয়
হটাত্ বলে উঠলো আগে কত সুন্দর দিন
কাটাতাম না ? ইতি কাঁদছেই !!!
.
 
twitterfacebookgoogle plusrss feedemail